রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভাসের পরিবর্তন ও ব্যায়াম পরিকল্পনা
রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় একটি বিরাট পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভাসের পরিবর্তন ও ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হয়ে থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় কি কি ধরনের খাবার রাখবেন এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে কিভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবেন সে সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে।
রমজান মাসে ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে কিভাবে ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবে সে সম্পর্কে আসুন বিস্তারিত জেনে নিই।
রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের কি কি সমস্যা লক্ষণীয়
রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকতে হয় যা তাদের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সে কারণে দেখা যায়, অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের অনেকক্ষণ না খাওয়ার কারণে শরীরে-কপালে ঘাম, চোখে অস্পষ্ট দেখা অনুভব করলে বুঝতে হবে ব্লাড সুগার কমে যাচ্ছে। এছাড়া ব্লাড সুগার বেশি বেড়েও যেতে পারে। এমনকি পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে দেরি না করে তৎক্ষণাৎ রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। এছাড়া রোজার দিনে বেশি কায়েকশ্রমে শরীরের শরকরার মাত্রা কমে যেতে পারে এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। ।
রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়
সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাটা বা ব্যায়াম করতে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু রোজার মাসে দিনের বেলা হাটা বা ব্যায়াম করা সম্ভব হয় না। প্রয়োজনে ইফতারের দুই ঘন্টা পর হাটা বা ব্যায়াম করা যেতে পারে। কিন্তু রমজান মাসে যদি ঠিকমত ২০ রাকআত তারাবির নামাজ আদায় করা হয়, তাহলে আর ব্যায়ামের দরকার হয় না। এছাড়াও বাসায় গ্লকোমিটার মেশিন দিয়ে ব্লাড সুগার মেপে দেখতে হবে, ব্লাড সুগার কমে বা বেড়ে যাচ্ছে কিনা। ইফতারের ঠিক ২ ঘন্টা পূর্বে, ইফতারের ২ ঘণ্টা পর এবং দিনের মধ্যভাগে রক্তের সুগার পরীক্ষা করতে হবে। অনেকেই আমরা মনে করি রক্ত নিলে রোজা হবে না। কিন্তু আলেমদের মতে, রোজা রেখে চিকিৎসা স্বার্থে রক্ত পরীক্ষা করা যায় এমনকি ইনসুলিনও নেয়া যাবে।
রোজায় স্বাস্থ্যগত উপকার
- ওজন কমে
- শরীরের বিপাকক্রিয়া ভালো হয়
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
- শরীরের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশিত হয়
ব্যায়ামের পাশাপাশি রমজানে খাদ্যাভাসের পরিবর্তন
আমাদের দৈনন্দিন খাওয়ার সময় সূচিতে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসে রমজান মাসে। সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের একটা সুনির্দিষ্ট ও সুনিয়ন্ত্রিত সময়সূচির খাদ্য অভ্যাস মেনে চলতে হয়। তাই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া জরুরী। ডায়াবেটিস রোগীরা সাধারণত সারা বছর নিয়মিত হাটা, ব্যায়াম, জগিং, সাঁতার, ইয়োগা ইত্যাদি করে থাকে। অনেকে সাইটিং, ওয়েট লিফটিং, সিঁড়িতে ওঠা-নামা, স্কিপিং, বুক-ডাউন ইত্যাদি করেন। অনেকেই জানেন, ব্যায়াম রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা। বিভিন্ন ব্যায়ামের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি সহজ ব্যায়াম হলো হাটা। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন কমপক্ষে আধা ঘন্টা(৩০ মিনিট) হাটা উচিত। এছাড়াও রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভাসে কিছুটা পরিবর্তন আনা আবশ্যক।
- সেহেরী যতদূর সম্ভব দেরি করে খেতে হবে। এর মানে হল শেষ সময়ে খাওয়া শেষ করতে হবে। তবে সেহেরী না খেয়ে রোজা রাখা যাবে না।
- ইফতারির সময় প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
- ভাজাপোড়া মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন মিষ্টি, জিলাপি ও চিনির শরবত খাওয়া যাবে না।
- লেবুর পানি, ডাবের পানি, টক দই খেতে হবে। এছাড়াও টক দই দিয়ে লবণ অথবা ঘোল বানিয়েও খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি এড়াতে করণীয়
রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি এড়াতে বাড়ির বাইরে বের না হয়ে নিরাপদ ভাবে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলা যেতে পারে--
- বাড়ির বারান্দায় অথবা ছাদে ইফতারির পর এবং সেহেরির আগে হাটা যেতে পারে।
- সম্ভব হলে বাসায় সাইক্লিং মেশিন অথবা ট্রেড মিলে ব্যায়াম করা যেতে পারে।
- পানি শূন্যতা দূর করতে ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
- বাসায় টেবিল টেনিস অথবা ব্যাডমিন্টন খেলা যেতে পারে।
- রোজা রাখা অবস্থায় হাত-পা কাঁপা অনুভূত হলে অথবা মাথা ঝিমঝিম, শরীর দুর্বল লাগা, চোখে ঝাপসা দেখা অনুভব হলে গ্লুকোমিটারের সাহায্যে রক্তের গ্লুকোজ মাপতে হবে।
- রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ২.৫ মিলিয়ন বা এর কম অথবা ১৬.৫ মিলি মন বা এর চেয়ে বেশি হলে রোজা ভেঙ্গে ফেলা নিরাপদ।
শেষকথা
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের একটি সহজ ও কার্যকর মাধ্যম ব্যায়াম। ব্যয়ামের মাধ্যমে সহজে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তাই রমজানে ডায়াবেটিস রোগীরা উপযুক্ত খাবারের সাথে সাথে ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এবার রোজা গ্রীষ্মকালের কাছাকাছি সময়ে হবে ফলে গরমে অধিক ঘাম একটা বিরক্তি কর কারণ হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পানি শূন্যতা থেকে সাবধানে থাকতে হবে। যদি দিনের বেলা অধিক পরিশ্রম করা হয়ে থাকে তাহলে ডায়বেটিস রোগীদের ঝুঁকি বেশি বেড়ে যায়। এজন্য রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের ঘামের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া ব্যায়াম করাকালীন সময়ে মানব দেহে সঞ্চিত শর্করা অতিরিক্ত খরচ হয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের হাইপোগ্লাইমসেমিয়া রোগ থেকে সাবধান থাকতে হবে। আশা করি, আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে রমজানের ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন ও ব্যায়াম সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url