আপেল কখন খাবেন এবং আপেল খাওয়ার উপকারিতা
আপেল আমাদের সকলের পরিচিত এবং অনেক পছন্দের একটি ফল। আপেল অপছন্দ করেন এমন মানুষ অনেক কমই আছে। এমনও মানুষ আছে যাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আপেল থাকাটা যেন অনিবার্য। আবার অনেকে রয়েছেন যারা আপেলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানেনা, আজকের আর্টিকেলটি মূলত তাদের জন্য।
প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সহজলভ্য ফল হচ্ছে আপেল। আমরা জানি, আপেলের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু আপেল কখন খাওয়া উচিত বা এটি খেলে কি কি উপকার হতে পারে তা আমরা অনেকেই জানিনা। আপেল আমরা কখন কিভাবে খাব এবং এটি খেলে আমাদের শরীরের কি উপকার হবে তা যদি আপনি সঠিক ভাবে জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আপেল এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আপেল কখন খাবেন এবং আপেল খাওয়ার উপকারিতা
- উপস্থাপনা
- আপেল কখন খাবেন?
- আপেল খাওয়ার উপকারিতা কী?
- সবুজ আপেল খাওয়ার উপকারিতা কী?
- খালি পেটে আপেল খাওয়া উপকার নাকি ক্ষতিকর?
- শেষ কথা
উপস্থাপনা
আপেলে শর্করা, চিনি, ফলিক এসিড, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি, লোহা ও ম্যাগনেসিয়াম আছে। এটি রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি হজমের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে সাহায্য করে। হজম শক্তি বাড়াতে আপেলের খোসায় পলিফেনলস নামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা শরীরের কোষ রক্ষা করে।
আপেল কখন খাবেন?
গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে একটি করে আপেল খেলে রক্তের ক্ষতিকর এল ডি এল কোলেস্টেরল কমে যায় ও উপকারী এইচ ডি এল কোলেস্টেরল বাড়ে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, প্রতিটা ফল খাওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে, এতে তা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। এই কারণে আপেল খাওয়ার একটি সুনির্দিষ্ট সময় আছে। পুষ্টি বিজ্ঞানের রীতিতে সকাল বেলা আপেল খাওয়ার উপযুক্ত সময়। কারণ, আপেলের খোসা আঁশ ও পেকটিন সমৃদ্ধ। অনেকেরই অপর্যাপ্ত ঘুম, দেরিতে ঘুম ইত্যাদির কারণে হজম জনিত সমস্যা দেখা দেয় । তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে আপেল খাওয়া সবচেয়ে ভালো। অন্যান্য ফলের তুলনায় সকালে আপেল খাওয়া অন্ত্রের ক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিকাল বা রাতে আপেল খাওয়া হলে তা হজম ও অন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। এর অর্থ হলো রাতে আপেল খাওয়া হলে গ্যাসের সমস্যা হয় এবং পরে অনেকটা সময় অস্বস্তি সৃষ্টি করে। আপেলের জৈব এসিড পাকস্থলীর এসিড সাধারণের তুলনায় বাড়িয়ে তোলে এবং অন্ত্রের ক্রিয়ায় সাহায্য করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা দুপুরের খাবারের আগে নাস্তা হিসেবে আপেল খেলে বেশি উপকার হয়। আপেল পুষ্টি সরবরাহে, ওজন কমাতে, ত্বক ভালো রাখতে, হজম শক্তি বাড়াতে এবং দীর্ঘ সময় শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে।
আপেল খাওয়ার উপকারিতাঃ
আপেল খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাই আপনি যদি প্রতিদিন আপেল খান তাহলে আপনার শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আপেল খেলে সাধারণত যেসব উপকার হবে নিচে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো
- দাঁত ভালো রাখেঃ
আপেল খেলে দাঁতের দারুন উপকার হয়। তার কারণ, আপেলে কামড় দিয়ে যখন আমরা খাওয়া শুরু করি তখন আমাদের মুখের ভিতর লালা সৃষ্টি হয়। এই পদ্ধতিতে দাঁতের কোনা থেকে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে আসে। এর ফলে সে ব্যাকটেরিয়া আর দাঁতের কোন ক্ষতি করতে পারে না । তাই বলে শুধু আপেল খেয়ে দাঁতের যত্ন নিলে হবে না। দাঁতকে ভালো রাখতে হলে আমাদের নিয়মিত ব্রাশ করতে হবে।
- ক্যান্সার দূর করেঃ
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ এর মতে, আপেল খেলে অগ্নাশয়ে ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রায় ২৩% হারে কমে। ইউরোপীয় জার্নাল অফ ক্যান্সার প্রিভেনশন-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে ব্যক্তিরা নিয়মিত আপেল খান তাদের ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম , যার কারণ আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনল আছে। একইভাবে, জার্নাল অফ নিউট্রিশনে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, যে মহিলারা বেশি আপেল খান তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়াও আপেলের মধ্যে থাকা ফাইবার মলাশয়ের ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে।
- হার্ট ভালো রাখেঃ
আপেলের মধ্যে এমন একটি ফাইবার আছে যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপেলের খোসার মধ্যে যে ফ্যানোলিক উপাদান থাকে তা রক্তনালী থেকে কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে। এর ফলে হার্টের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে ।
- ত্বক ভালো রাখেঃ
ত্বক ভালো রাখার ক্ষেত্রেও আপেল অনেক অবদান রাখে। প্রতিদিন আপেল খেলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়।
- হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
আপেলের ইতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফাইবার। যা আপেলে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। আপেলের এই ফাইবার উপাদান আমাদের পেটের যেকোনো সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ
আপেল ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য এই দুই সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখে। আপেল শরীরের বর্জ্য থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে এক দিকে যেমন বারবার বাথরুমে যেতে হয় না অন্যদিকে তেমনি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর করে।
সবুজ আপেল খাওয়ার উপকারিতাঃ
সবুজ আপেল আমাদের শরীরের ক্ষেত্রে অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। আসুন আমরা জেনে নিই সবুজ আপেল কিভাবে আমাদের শারীরিক সুস্থতার ক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা রাখে।
- কোলেস্টেরল মাত্রা কমঃ
সবুজ আপেলে অপরিহার্য ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। সবুজ আপেলে কোন ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই এবং যতটুকু আছে তা মাত্রায় খুব কম। যেহেতু সবুজ আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার উপাদান আছে তা দেহের কোলেস্টেরল মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে।
- প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ
সবুজ আপেলের মূল সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হল এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি যেমন ভিটামিন সি, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনলগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া গুলোকে নিরপেক্ষ করতে সহায়তা করে। এটি হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে অবদান রাখে এবং স্বাস্থ্যকর বার্ধক্যকেও সাহায্য করে ।
- হজমে সাহায্য করেঃ
ফাইবার সবুজ আপেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা বিভিন্ন উপায়ে হজমে সাহায্য করে। অদ্রবণীয় ফাইবার মলের সাথে প্রচুর পরিমাণে যোগ করে নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ
প্রাকৃতিক মিষ্টি থাকা সত্ত্বেও, সবুজ আপেলে তুলনামূলকভাবে কম গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে, যার অর্থ এটা উচ্চ-গ্লাইসেমিক খাবারের তুলনায় রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে এবং স্থিরভাবে বৃদ্ধি করে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সবুজ আপেলে থাকা ফাইবার উপাদান রক্তের প্রবাহে চিনির শোষণকে ধীর করতেও ভূমিকা পালন করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
সবুজ আপেল ভিটামিন সি এর একটি চমৎকার উৎস এবং এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ইমিউন সিস্টেমকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। সবুজ আপেল নিয়মিত খেলে তা অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের হোক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- স্বাস্থ্যকর ও সতেজ ত্বকঃ
সবুজ আপেলে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ করে ভিটামিন সি, দূষণ এবং অতিবেগুনী বিকিরণের মতো পরিবেশগত কারণগুলির দ্বারা সৃষ্ট অক্সিডেটিভ ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্বকের স্বাস্থ্যে অবদান রাখে। সবুজ আপেল ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা এবং দৃঢ়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং সবুজ আপেলের হাইড্রেটিং বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বল রঙে অবদান রাখে।
- ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করেঃ
সবুজ আপেলের জৈব এসিড উপাদান আমাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে।তাই যদি আপনার বারবার ক্ষুধা লেগে থাকা সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সবুজ আপেল খেয়ে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
- দেহে শক্তি বৃদ্ধি করেঃ
সবুজ আপেল আমাদের দেহে শক্তি যোগায়। সবুজ আপেলের অন্যতম উপাদান কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের দেহের জন্য খুব উপকারী। বিশেষ করে যারা খেলাধুলা করেন, কঠোর পরিশ্রম করেন তারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ আপেল অবশ্যই রাখুন।
- লিভার ও নালীর সমস্যা রোধ করেঃ
সবুজ আপেল আমাদের দেহের লিভারের যেকোনো সমস্যা দূর করে এবং এর পাশাপাশি খাদ্যনালী, পরিপাক নালী ও অন্যান্য নালীর সমস্যা দূর করে।
খালি পেটে আপেল খাওয়া উপকার নাকি ক্ষতিকরঃ
শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রতিদিন ফল খাওয়া আমাদের সকলের প্রয়োজন। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে সকালে একটি আপেল খেলে এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কথায় আছে খালি পেটে জল আর ভরা পেটে ফল। আসলে খালি পেটে ফল খাওয়ার তথ্যটা কতটা সত্য সে বিষয়ে জানা যায়নি। অনেকের মতে এ তথ্যটা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। কারণ, আপনি কি জানেন ফল খাওয়ার সেরা সময় কিন্তু সকাল। অর্থাৎ ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ফল খেতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। পুষ্টিবিদদের মতে ফল খাওয়ার আগে নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি পান করে নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোজ সকালে একটা করে আপেল খেলে উপকার পাবেন। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো উপোস বা রোজা ভাঙ্গার পরও কিন্তু ফল বা ফলের রস খাওয়া হয়। সুতরাং খালি পেটে আপেল খেলে কখনোই আপনার শরীর খারাপ হবে না।চিকিৎসকরা সব সময় বলেন সকালে খালি পেটে আপেল খেতে। কারণ আপেলের মধ্যে রয়েছে আইরন, প্রোটিন ও ভিটামিন। এছাড়া আপেল এ কার্বোহাইড্রেট ও পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
খালি পেটে আপেল খাওয়ার উপকারিতাঃ
সকালে আপেল খেলে সারাদিন শরীরে এনার্জি পাওয়া যাবে।
যারা ওজন কমাতে চান তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি করে আপেল খেতে পারেন। আপেলের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। খালি পেটে আপেল খেলে হার্ট সুস্থ থাকে।
আপেলে উপস্থিত ফাইবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
আপেল রয়েছে আপেলে রয়েছে ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম এই উপাদান গুলো হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমায়।
গবেষণায় দেখা গেছে পরিমাণ মতো আপেল খেলে ২০ শতাংশ স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি আপেল খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url